প্রসঙ্গ সুপ্রিম কোর্টে উঠতে পারে আরজি কর হাসপাতালে চার বছর আগে বাচ্চা উধাও হয়েছিল। কিন্তু সেই মামলার নিষ্পত্তি আজও হয়নি। এবার আবার নতুন করে সামনে এসেছে মামলাটি। সেই সময়ে হাসপাতালের অধ্যক্ষ ছিলেন চিকিৎসক শুদ্ধোদন বটব্যাল। আদালত সূত্রের খবর, ২০২০-র ১৩ জুন আরজি কর হাসপাতালে এক দম্পতি সদ্যোজাত অসুস্থ সন্তানকে ভর্তি করেন। ১৫ জুন সেই পুত্রসন্তান মারা যায় বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
চার বছর আগে আরজি কর হাসপাতাল থেকে বাচ্চা উধাও-এর মামলা নতুন করে সামনে এসেছে। কলকাতা হাইকোর্ট সূত্রের খবর, সেই মামলার নিষ্পত্তি আজও হয়নি। সেই ঘটনাকে ঘিরে ওই হাসপাতালে বাচ্চা পাচার চক্র সক্রিয় থাকার অভিযোগ উঠেছিল তখনই। যদিও সেই সময়ে হাসপাতালের অধ্যক্ষ ছিলেন চিকিৎসক শুদ্ধোদন বটব্যাল। সন্দীপ ঘোষ তার পরের বছর আরজি করে যোগ দেন।
আদালত সূত্রের খবর, ২০২০-র ১৩ জুন আরজি কর হাসপাতালে এক দম্পতি তাঁদের সদ্যোজাত (একদিন বয়স) অসুস্থ সন্তানকে ভর্তি করেন। ১৫ জুন সেই পুত্রসন্তান মারা যায় বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। অভিযোগ ওঠে, ২৫ জুন পর্যন্ত পরিবারকে জানানো হয়নি সে কথা। পরে একটি মৃতদেহ দেখানো হয় তাঁদের। সেটি তাঁদের পুত্রসন্তান বলে মানতে আপত্তি করেন দম্পতি।
মামলা হয় হাইকোর্টে। হাইকোর্টের নির্দেশে ৭ জুলাই সেই দেহের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। সেই পরীক্ষার রিপোর্টেই ধরা পড়ে যে পরিবারের অভিযোগ সত্যি। চিহ্নিত হয়, ওই দম্পতির সঙ্গে ওই মৃতদেহের কোনও মিল নেই। এর পিছনে মানব পাচার চক্রের হাত থাকতে পারে, এমন অভিযোগেই সিআইডিকে নিয়োগ করা হয়। যদিও অসুস্থ সেই সন্তানের খোঁজ আর পাওয়া যায়নি।
আরজি করে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে আবার উঠে এসেছে ওই মামলার প্রসঙ্গ। মামলার আবেদনকারী বাবুন মণ্ডলের আইনজীবী ব্রজেশ ঝা ও তরুণজ্যোতি তিওয়ারি বলেন, কী পদক্ষেপ হয়েছিল, তা আজও অজানা। তবে আদালতের একের পর এক নির্দেশের পরেও কোনও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে হাইকোর্টও। তারপরেও মামলাটি নিস্পত্তি না করে রাজ্যকে পদক্ষেপের জন্য সময় দিয়েছিল।
আইনজীবীদের বক্তব্য, ‘বর্তমানে আরজি কর প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে চালু মামলায় অথবা হাইকোর্টে ফের মামলাটি তোলা যায় কি না, তা নিয়ে আমরা পরামর্শ করছি। কারণ বেআইনি কাজ এবং তার জন্য শাস্তি না দেওয়ার প্রবণতা যে আরজি করের শিকড়ে রয়েছে, তা প্রমাণিত। এই ঘটনাতেও সিবিআই তদন্তের দাবি করা হবে।’
আদালত সূত্রের দাবি, রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত এবং আইনজীবী শীর্ষণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় ও অর্ক কুমার নাগ শুনানির প্রথম দিকে লাগাতার হাসপাতালকে সমর্থন করে গেলেও ডিএনএ রিপোর্ট আসার পরে আদালতের উপরেই গোটা বিষয়টি ছেড়ে দেন।
কোভিড কালে বিচারপতি স়ঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ ভিডিয়ো কনফারেন্সে এই শিশু হদিশের মামলার শুনানি বেশ কিছুদিন কার্যত ‘ইন ক্যামেরা’ করে দেওয়ায় তা আর প্রকাশ্যে আসেনি। তদন্ত করতে আদালত সিআইডি-র তদানীন্তন ডিআইজি প্রণব কুমারের নেতৃত্বে কমিটি গড়ে দেয়। ২০২০-র জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত অন্তত ছ’টি শুনানি করেও প্রকৃত দোষীদের রাজ্য চিহ্নিত না করায় উষ্মা প্রকাশ করে ডিভিশন বেঞ্চ।
সেই মামলার তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্টের সঙ্গে ২০২০-র ১১ নভেম্বরে শুনানিতে দেওয়া চূড়ান্ত রিপোর্টে বিস্তর গরমিল দেখে ক্ষোভ আর ঢাকতে পারেনি আদালত। আদালত জানিয়েছিল, কাদের যোগসাজসে ঘটনাটি ঘটেছিল তা নির্দিষ্ট করতে হবে। আদালত মনে করছে, হাসপাতালের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের ফলে এই ঘটনা ঘটেছে।
যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা নিজেদের দায় ঢাকতে অন্যদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করছেন। সেই মামলায় আসল দোষীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে রাজ্যকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। ১৫ দিন পরে মামলাটির শুনানি হওয়ার কথা ছিল। আজও নিষ্পত্তি হয়নি সেই মামলার।
লেখকের :
অমিত চক্রবর্তী