পশ্চিমবঙ্গ

আর জি কর হাসপাতাল: ‘নিয়মরক্ষার মতো চলছে আউটডোর’, ক্যান্সার আক্রান্তদের চোখে জল

আর জি কর : ক্যান্সার আক্রান্তদের চোখের জল। তাঁদের পরিজনদের করজোড়ে অনুরোধ। প্রবল শারীরিক যন্ত্রণা। চিকিৎসা না পেয়ে হতাশা, আতঙ্ক যাই হোক আর জি করে চিকিৎসা না পেয়ে চরম অনিশ্চয়তা শুরু হয়েছে রোগী মহলে। কলকাতায় চিকিৎসার খোঁজে লাট্টুর মতো পাক খাচ্ছেন ভূমিহীন কোনও কৃষক। কেউ চোখের সামনে প্রিয়জনকে কাতরাতে দেখে বেসরকারি হাসপাতালের খরচ জানতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। কেউ বলছেন, ‘রাজায়-রাজায় যুদ্ধ হচ্ছে। কিন্তু প্রাণ তো যাচ্ছে আমাদের মতো গরিবদের।’
পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলির লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা পার্বতী দাস। পরিবারটি ভূমিহীন। পার্বতীদেবীর ছেলে ভগীরথ রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন। সংসারের চালাতে ট্রেনে হকারিও করেন। মাস তিনেক আগে পার্বতীর ক্যান্সার ধরা পড়ে। স্থানীয় হাসপাতালে দেখিয়েছিলেন। সেখান থেকে রেফার করে আর জি কর হাসপাতালে। ছ’মাস পর শারীরিক পরীক্ষার ডেট পড়ে। কিন্তু চিকিৎসা তাড়াতাড়ি শুরু করতে বিস্তর ধারদেনা করে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা করান ভগীরথ। তারপর ১২ আগস্ট অপারেশনের দিন দেয় আর জি কর। কিন্তু হাসপাতালে সমস্যা শুরু হল। ফলে তিনি হাসপাতালমুখো হননি। এদিকে মায়ের অসুস্থতা ক্রমশ বাড়তে থাকে। বুধবার এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়েছিলেন। দিনভর বিভিন্ন বিভাগে চরকি পাক খেয়েছেন। তারপর চিকিৎসকদের মুখ ঝামটা খেয়ে ফিরে আসেন আর জি করে। সন্ধ্যায় চিকিৎসকরা দেখে বলেছিলেন, ‘এখানে আমাদের নিরাপত্তা নেই। আপনারা মরে পড়ে থাকলে কে দায় নেবে?’ পরের দিন মাকে নিয়ে ভগীরথ ফের এসেছিলেন হাসপাতালে। এবার এক চিকিৎসক বলেন, ‘পরিস্থিতি তো দেখছেন। সামনের সোমবার আসুন।’ সোমবার আউটডোরের সামনে পলিথিনে শুয়ে ছিলেন পার্বতীদেবী। বললেন, ‘ডাক্তারবাবু সামনের সোমবার আসতে বলেছেন। সকলের সহযোগিতা না পেলে অপারেশন করায় সমস্যা হবে এটাও বলেছেন। উনি নিজের ফোন নম্বর দিয়েছেন যোগাযোগ করার জন্য।’ ভগীরথবাবু বলেন, ‘ভোর তিনটেয় বেরিয়ে এখানে এসেছিলাম। রাতে বাড়ি পৌঁছব। তিন মাস কাজ বন্ধ রেখেছি। ধারদেনা করে মাকে নিয়ে লড়াই চালাচ্ছি। তারপরও সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে যেতে পারব কি না ভগবান জানে।’ চোখের জল এসে গিয়েছিল তাঁর। চোখ মুছে বলেন, ‘অপেক্ষা ছাড়া আমাদের মতো গরিব মানুষের কোনও উপায় নেই।’ পার্বতী বা ভগীরথ কিন্তু একা নন।
কলকাতার শ্যামবাজার স্ট্রিটের বাসিন্দা শেফালি পাল ক্যান্সার আক্রান্ত। চিকিৎসা চলছে আর জি করে। অপারেশনের পর ছ’টি কেমো দেওয়া হয়ে গিয়েছে। তবে এখনও অসুস্থ। বুকে জল জমছে। তাঁর ছেলে কুন্তল মাকে আউটডোরে এনেছিলেন। কিন্তু চিকিৎসায় না পেয়ে ফিরতে হয়েছে তাঁদের। কুন্তুলবাবু বলেন, ‘চিকিৎসক বললেন, এখানে হবে না। এনআরএস বা মেডিক্যালে যান। কোথাও কিছু হচ্ছে না। নার্সিংহোম কত টাকা নেয় তা নিয়ে খোঁজখবর করছি। কয়েক দিনের জন্য হলেও মাকে ভর্তি করতেই হবে। পরিস্থিতি ঠিক হলে এখানে আসব কেমো নিতে।’ বারাকপুর থেকে বাবাকে দেখাতে নিয়ে এসেছিলেন চন্দন দত্ত। বললেন, ‘নিয়মরক্ষার মতো করে আউটডোর ও ইনডোর চলছে। যাঁদের কোথাও দেখাবার ক্ষমতা নেই তাঁরাই শুধু এসেছেন। অধিকাংশ রোগীকে শুধু ওষুধ লিখে ছেড়ে দিচ্ছে। নেতা-মন্ত্রী, ডাক্তারদের পরিবারের লোকেরা এমন যন্ত্রণায় পড়লে নিশ্চই দ্রুত সমস্যার সমাধান হতো। গরিব মানুষ মরলে কার কি? আমাদের জীবনের কোনও দাম নেই?’

Shares:

Related Posts

দেশ ও বিদেশ

নিশীথ-উদয়ন সংঘর্ষ! রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চাইলেন রাজ্যপাল

TMC and BJP clash amid rallies: উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক উপস্থিতিতে দুই দলের সমর্থকদের হাতাহাতির ঘটনায় রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চাইলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ
নিউজ

শুভেন্দু অধিকারী বনাম মুখ্যমন্ত্রী

স্কুলে-স্কুলে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয়া খাতা, 'নির্বাচনী বিধিভঙ্গ,' ছবি পোস্ট করে নিশানা শুভেন্দুর অধিকারী। ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে খাতা দিচ্ছে স্কুল শিক্ষা দফতর। কিন্তু সেই খাতার সামনের মলাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি' কেন
পশ্চিমবঙ্গ

BJP Bangla Bandh: বিজেপির ডাকে ১২ ঘণ্টার বাংলা বন‍্‍ধ! জেলায় জেলায় অবরোধ

বিজেপির ডাকা ১২ ঘণ্টার বাংলা বনধে প্রভাব পড়ল ট্রেন চলাচলে। বুধবার সকাল থেকেই জেলায় জেলায় একাধিক স্টেশনে লোকাল ও দূর পাল্লার ট্রেন অবরোধ (BJP Bangla Bandh) করেছেন বিজেপির কর্মী ও
নিউজ

১ লা বৈশাখে আবহাওয়া কেমন থাকবে? 

রবিবার পয়লা বৈশাখ। আজ বাঙালি কেনাকাটিতেই ব্যস্ত থাকবে। গত দুদিন সেরম বৃষ্টি হয়নি দক্ষিণবঙ্গে (South Bengal)। বেড়েছে তাপমাত্রাও। আবহাওয়া দপ্তরের (Weather Department) পূর্বাভাস অনুযায়ী, এবার বদলাবে আবহাওয়া। আরও বাড়বে গরম।